শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

কেন এত বেশী আধুনিক বৃটিশ ক্যারিয়ার নারীরা ইসলাম গ্রহন করছেন? - ইভ আহমেদ

লেখিকা ইভ আহমেদ: মুসলিম হিসেবে বড় হয়ে পরবর্তীতে ইসলাম ত্যাগ করেন

[কিছুদিন আগে ডেইলী মেইলের এই লেখাটি আমাকে ফরোয়ার্ড করা হয়। লেখাটির লেখিকা একজন প্রাক্তন মুসলিম নারী ইভ আহমেদ (উপরের ছবি), যিনি মুসলিম হিসেবে লালিত হয়ে পরবর্তীতে ইসলাম ত্যাগ করেছিলেন। লেখাটির বাংলা অনুবাদ নীচে দিচ্ছি। অনুবাদের দুর্বলতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।]

Click This Link

======================================

গত উইকএন্ডে টোনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা তার ইসলাম গ্রহনের কথা ঘোষনা দেন। সাংবাদিক লরেল বুথ তার এই বিশ্বাস গ্রহন করাকে ইরানের পবিত্র অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত করেন। আরো অনেক আধুনিক বৃটিশ নারীর মত তিনিও একজন যিনি ইসলাম গ্রহন করলেন। এখানে নীচের লেখায় লেখিকা ইভ আহমেদ, যিনি মুসলিম হিসেবে বড় হয়ে পরবর্তীতে ইসলাম ত্যাগ করেন, এই ধর্মান্তরের কারন ব্যাখা করছেন।



আমার ছেলেবেলার অধিকাংশ সময় আমি ইসলামকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। লন্ডনে ইংলিশ মা এবং পাকিস্তানী মুসলিম বাবার ঘরে আমার জন্ম। আর আমি বাবার সন্তান হিসেবে প্রশ্নাতীত ভাবে তার বিশ্বাস অনুযায়ী বড় হই।

কিন্তু অন্তরে আমি একে ঘৃনা করতাম। আঠার বছর বয়েসে যেদিন আমি ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাড়ী ছাড়লাম, সেদিনই আমি একে পরিত্যাগ করলাম। আমার ধারনা হয়েছিল, মুসলিম মানেই হচ্ছে "না" শব্দটির বার বার পুনরুক্তি।

আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের মেয়েদের জন্য এত বেশী বিষয় নিষিদ্ধ ছিল যা আমার সাধারন ইংলিশ বান্ধবীদের জন্য অনুমিত ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছিল যা কিছু আনন্দজনক তার সবকিছুই আমাদের মত মেয়েদের জন্য হারাম, বা নিষিদ্ধ। খুব বেশী নিয়মকানুন ছিল, যেমন বাশী বাজানো যাবে না, চুইং গাম খাওয়া যাবে না, বাইক চড়া যাবে না, টপ অব দ্য পপস দেখা যাবে না, কোন প্রশ্ন করা যাবে না কিংবা জবাব দেয়া যাবে না। কুকুর রাখা যাবে না যেহেতু তারা অপরিচ্ছন্ন।

এসব নিয়ম কানুন আমার বাবা আমাদের উপরে চাপিয়ে দেন যার ফলে আমি ধারনা করে নেই এসব নিয়ম কানুন ভাল মুসলিম হবার জন্য শর্ত বিশেষ। যার ফলে এটা বিষ্ময়কর নয় যে, যখনই আমি স্বাধীনতা পাবার বয়েসে পৌছাই তখনই আমি এই পুরো প্যাকেজকে পরিত্যাগ করি এবং ইসলামকে আমার পিঠ দেখাই। যত যাই হোক, একজন আধুনিক স্বাধীন বৃটিশ নারী কি করে এ ধরনের জীবনকে মেনে নিতে পারে?

যা হোক, এর বিপরীত দেখা গেল অনেক ক্ষেত্রে, যার শেষ বিষ্ময়কর ধর্মান্তরী হলেন টোনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা লরেল বুথ। আর এদিকে আমার অতীতের সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে দেবার পরে আমি আগ্রহের সাথে লক্ষ্য করছিলাম বৃটিশ নারীদের অধিক মাত্রায় ইসলাম ধর্মের দিকে ঝুকে পরার বিষয়টি। তেতাল্লিশ বছর বয়েসী ব্রডকাস্টার এবং সাংবাদিক বুথ বলেছেন, তিনি যখনই বাড়ীর বাইরে যান তখনই হিজাব পরে মাথা ঢাকেন, প্রতিদিন পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং যখনই পারেন তখনই মসজিদে যান। ছয় সপ্তাহ আগে কুম শহরে ফাতেমা আল মাসুমেহ এর মাজার জিয়ারতের সময়েই তিনি মুসলিম হবার ইচ্ছা পোষন করেন এবং বলেন, "আজ মংগলবার সন্ধ্যা, এবং আমি বসে এই আত্মিক নেশাকে অনুভব করছি আনন্দ ও খুশীর সাথে।" ইরানে তার এই আত্মিক জাগরনের পূর্বে তিনি ইসলামের বিষয়ে সহানুভূতি সম্পন্ন ছিলেন এবং প্যালেস্টাইনে উল্লেখযোগ্য সময় কাজ করেন। "আমি সবসময়েই এ বিষয়টি যে শক্তি ও শান্তি দেয় তাতে মুগ্ধ ছিলাম।"



লরেল বুথ: শেরী ব্লেয়ারের সৎ বোন যিনি ইরানের পবিত্র অভিজ্ঞতা থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন

আমি বিষ্মিত হই কি করে নারীরা এমন একটি ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে যা আমাকে এমন নীচু অবস্থানে থাকার অনুভূতি দিয়েছিল। কি করে তাদের ইসলাম সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে এত বেশী আলাদা হতে পারে?

সোয়ানসেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেভিন ব্রাইস, যিনি শ্বেতাঙ্গদের ইসলামে ধর্মান্তর নিয়ে গবেষনা করছেন, বলেছেন, "এসব নারীরা এই মিছিলের অংশ মাত্র"। তিনি ব্যাখা করেন, "তারা জীবনের গভীর অর্থের প্রতি আগ্রহী, এবং গভীর ভাবে চিন্তা করে। এদের বাইরে অন্যান্য নারীরা ইসলাম গ্রহন করে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার জন্যে, যেমন মুসলিম স্বামী ও তাদের পরিবারকে খুশী করার জন্যে - মসজিদ-নামাজ-রোজার প্রতি তাই আগ্রহী নয়।"

আমি অনেক ভাবে বাছাই করে কয়েকজন শ্বেতাঙ্গ পশ্চিমা ধর্মান্তরিত নারীর সাথে কথা বলি আমার ফেলে আসা বিশ্বাসকে পুনরায় পরীক্ষার জন্যে। তেতাল্লিশ বছরের ক্রিস্টিন বেকার, প্রাক্তন এমটিভির উপস্থাপিকা যিনি এক সময়ে উদার পশ্চিমা স্টাইলের জীবন যাপন করেছেন, যে জীবনের জন্য আমি এক সময়ে উন্মূখ হয়েছিলাম - তিনি সেই জীবনকে ফিরিয়ে ইসলামের প্রতি অনুগত হয়েছেন। কারন কি? তার জবাব, আমার এক সময়কার কাঙখিত "যা খুশী" এই উদার সমাজ আজ আমার কাছে লেফাফা দুরস্ত এক শূন্যতা বলে প্রমানিত হয়েছে।



এমটিভির উপস্থাপিকা ক্রিস্টিন বেকার মাইক জগারের সাথে (আশির শেষ দিকে)

ক্রিস্টিনের জীবনের মোড় ঘোরানো মুহুর্ত ছিল যখন সে ১৯৯২ সালে সাবেক পাকিস্তানী মুসলিম ক্রিকেটার ইমরান খানের সাথে ডেটিং করছিল। ইমরান তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং সে তখন সেখানকার মানুষের উষ্ণতা এবং আত্মিকতায় অভিভূত হয়ে যায়। ক্রিস্টিন বলেন, "যদিও আমাদের সম্পর্ক টেকসই ছিল না, তবুও আমি মুসলিম বিশ্বাস নিয়ে পড়াশোনা করি এবং পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হই। আমার চাকুরীর কারনে
আমি সারা দুনিয়া ঘুরি এবং রক স্টারদের ইন্টারভিউ নেই, তাতেও আমার অন্তরে শূন্যতা থেকে যায়। এখন, সবশেষে, আমি তৃপ্তি পেয়েছি কারন ইসলাম আমাকে জীবনের অর্থ দান করেছে।"

"পশ্চিমে আমরা সবসময়ই কৃত্রিম কারনে ক্লান্ত হয়ে থাকি, যেমন, কি ড্রেস পড়ব। ইসলামে সবার লক্ষ্য উচু গন্তব্যের দিকে। সবকিছুই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা হয়ে থাকে। এটা সম্পূর্ন আলাদা মূল্যবোধের জীবন।"


ক্রিস্টিন বেকার: ইসলাম জীবনকে পবিত্র করেছে

"আমার এই লাইফস্টাইল সত্ত্বেও আমি ভেতরে শূন্যতা অনুভব করেছি এবং অনুভব করতে পেরেছি মুসলিম হওয়াটা কতটুকু স্বাধীনতার বিষয়। শুধু মাত্র একজন বিধাতার অনুসরন জীবনকে পবিত্র করে। তুমি সমস্ত ক্রেজের পিছনে ছুটছ না।"

"আমি জার্মানীতে একটি প্রোটেস্ট্যান্ট পরিবারে বড় হই, যারা খুব ধার্মিক ছিল না। আমি ড্রিংক করতাম এবং পার্টিতে যেতাম, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমাদেরকে ভাল হয়ে চলতে হবে কারন পরকাল রয়েছে। আমরা আমাদের নিজেদের কর্মের জন্য দায়ী।"

ভাল সংখ্যক নারীর ক্ষেত্রে, ইসলামের সাথে তাদের প্রথম পরিচয় মুসলিম বয়ফ্রেন্ডদের সাথে ডেটিং এর মাধ্যমে। এসেক্সের ডেগেনহামের ৩১ বছর বয়েসী লিন আলী স্বীকার করেছেন যে তিনি ছিলেন টিপিক্যাল পার্টি লাভিং টিন এজার। তিনি বলেন, "আমি বাইরে যেতাম এবং বন্ধুদের সাথে মাতাল হতাম, শরীর প্রকাশকারী কাপড় পরতাম এবং ছেলেদের সাথে ডেট করতাম। আমি পার্ট টাইম কাজ করতাম তবে মূলত ক্লাবেই কাটাতাম। ক্রীষ্টান হিসেবে আমি কিছুটা প্রার্থনা করতাম তবে আমি গডকে একজন ডাক্তার হিসেবেই নিয়েছিলাম আমার জীবনের সমস্যাগুলো ঠিক করার জন্যে। কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি জবাব দিতাম আমি ফাস্ট লাইফ এনজয় করি।"

কিন্তু যখন তার বয়ফ্রেন্ড জাহিদের সাথে ইউনিভার্সিটিতে পরিচয় হল তখন নাটকীয় ঘটনা ঘটল। সে বলছিল, "জাহিদের বোন আমাকে ইসলাম সম্পর্কে ধারনা দিল এবং তা যেন আমার জীবনের সাথে খাপে খাপে মিলে গেল। আমি জানি, সব কিছুর উপরে রয়েছে আমার নিজের অনুসন্ধিৎসা। আমি জীবনে যা খুজছিলাম তা হার্ড ড্রিংকিং পার্টি স্টাইল দিয়ে পূরন হচ্ছিল না।"

লিন ১৯ বছর বয়েসে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। "সেদিন থেকে আমি হিজাব পরা শুরু করি।" সে ব্যাখা করছিল, "এবং এখন আমি সাধারনের মাঝে কখনও চুল দেখাই না। বাসায় আমার স্বামীর সামনে সাধারন ওয়েস্টার্ন পোশাকে থাকলেও বাইরে এভাবে যাই না।"


লিন আলী: দিনে পাচ বার নামাজে সুখী

সাম্প্রতিক কালের একটি ইয়োগোভ সার্ভেতে বলা হয়েছে অর্ধেকেরও বেশী বৃটিশ নাগরিক ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনায় বিশ্বাসী - ইসলাম চরমপন্থা, নারী নির্যাতন এবং লিংগ বৈষম্যকে উৎসাহিত করে। একজন জিজ্ঞেস করতে পারেন কি কারনে এরা নিজেদের সেদিকে নিয়ে গিয়েছেন?

স্ট্যাটিসটিকস এটাও বলে যে মুসলিম ধর্মান্তর শুধু বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা নয়, বরং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যত যাই হোক, ইসলাম পৃথিবীর সবচাইতে ক্রমবর্ধমান ধর্ম এবং শ্বেতাঙ্গরাই এই গল্পের গুরুত্ববহ বাহক।
কেভিন ব্রাইস বলেন, "এভিডেন্স বলছে পশ্চিমে নারী কনভার্ট পুরুষ কনভার্টের তুলনায় দ্বিগুন।"

আরো বলা চলে, এই নারী ধর্মান্তরগন প্রায়শই তাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করতে আগ্রহী - বিশেষত হিজাবে। অন্যদিকে মুসলিম হিসেবে বেড়ে ওঠা নারীরা বরং হিজাবকে অপছন্দ করে। "সম্ভবত এভাবে নিজেদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করার কারনে এরা বেশী দৃষ্টি আকর্ষন করে থাকেন এবং শ্বেতাঙ্গ মুসলিমরা জন্ম মুসলিমদের চেয়ে বেশী বৈষম্য রিপোর্ট করেন।" ব্রাইস বলেন, "যেটা ক্রিস্টিন বেকারের ক্ষেত্রে হয়েছে। বেকার বলেছিলেন, "জার্মানীতে রয়েছে ইসলামোফোবিয়া। আমি ধর্মান্তর হবার পরে আমার চাকুরী হারাই। আমার বিরুদ্ধে প্রেস প্রচারনা চালানো হয়েছে এ ধারনা দিয়ে যে সমস্ত মুসলিমরা টেরোরিস্টদের সমর্থন করে। আমি নিন্দিত হই। এখন আমি এনবিসি ইউরোপের উপস্থাপিকা।"

"আমি নিজেকে একজন ইউরোপিয়ান মুসলিম মনে করি যারা জন্ম মুসলিমদের চেয়ে আলাদা। আমি একজন মরক্কানকে বিয়ে করি। কিন্তু এ বিয়ে টেকেনি কারন সে আমার উপর অনেক রেসট্রিকশন চাপায়। সে তো এভাবেই বড় হয়েছে। একজন ইউরোপিয়ান মুসলিম হিসেবে আমি প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্ন করি, কোনকিছু অন্ধ ভাবে মেনে নেই না।"

"কিন্তু আমি মুসলিম কমিউনিটির উষ্ণতা এবং আতিথেয়তাকে ভালবাসি। মুসলিমদের জন্য ইউরোপের সবচেয়ে ভাল জায়গা হল লন্ডন, যেখানে চমৎকার ইসলামিক কালচার রয়েছে এবং আমি এ নিয়ে সুখী। ""

"কেউ কেউ নিজেকে কমিউনিটির সাথে সংযুক্তির জন্য আকৃষ্ট হয়ে থাকে - যে মূল্যবোধ পাশ্চাত্যে ক্ষয়ে গিয়েছে।" ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের সিনিয়র লেকচারার হাইফা জাওয়াদ বলেন। যিনি শ্বেতাঙ্গ ধর্মান্তরের উপরে পড়াশোনা করছেন।

"আজকের ঘুনে ধরা সমাজে জীবনের সব ক্ষেত্র থেকে নারী এবং বৃদ্ধদের প্রতি প্রথাগত শ্রদ্ধা কমে যাওয়ায় অনেকে দুঃখবোধ করেন। এই মূল্যবোধগুলো কোরানে প্রতিফলিত হয়েছে যা মুসলিমদের মেনে চলতে হয়।" ব্রাইস আরো বলেন।

এই মূল্যবোধই কর্নওয়ালের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়েসী ইয়োগা শিক্ষিকা ক্যামিলা লেল্যান্ডকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করেছে। দুই বছর বয়েসী কন্যা ইনায়ার সিঙ্গল মাদার ক্যামিলা নারীবাদী এবং বুদ্ধিবাদী মনোভাবের কারনে মধ্য বিশের দিকে ইসলাম গ্রহন করেন।


ক্যামিলা লেল্যান্ড, ৩২ বছর বয়েসী: ওয়েস্টার্ন পোশাকে

তিনি বলেন,"আমি জানি নারীবাদী এবং ইসলাম - এ দুটো শব্দের একত্র উচ্চারনে মানুষ বিষ্মিত হবে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে ইসলাম নারীকে সমতা দিয়ে থাকে এবং সেটা যে সময়ে এই ধর্ম জন্ম নেয় সেই সময়কার পুরুষতান্ত্রিক ধারনার বিপরীত।"

"মানুষ ভুল করে সংস্কৃতিকে ধর্মের সাথে গুলিয়ে। হ্যা, অনেক মুসলিম সমাজে নারীদের নিজস্ব কোন স্বাধীনতা নেই, কিন্তু আমি যখন বড় হই তখন পশ্চিমা সমাজ দিয়ে আরো নির্যাতিত বোধ করি।"

তিনি বলেন, "নারীদের উপর অব্যহত চাপ রয়েছে ড্রিংক এবং সেক্সের ক্ষেত্রে পুরুষের মত আচরন করার। এর সত্যিকার কোন মানে নেই। ইসলাম অনুযায়ী, তুমি যদি কোন সম্পর্ক শুরু কর তবে তা হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি। "


ক্যামিলা লেল্যান্ড, ৩২ বছর বয়েসী: মুসলিম পোশাকে যিনি ইসলাম গ্রহন করেন নারীবাদী ও বুদ্ধিবাদী মনোভাবের কারনে

সাউথহ্যাম্পটনে বড় হওয়া ক্যামিলার বাবা ছিলেন সাউথ হ্যাম্পটন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের পরিচালক এবং মা ছিলেন হোম ইকোনোমিকসের শিক্ষিকা। ক্যামিলার ইসলাম নিয়ে আগ্রহ শুরু হয় স্কুল থেকে। সে পরবর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডল ইস্ট স্টাডিসের উপরে মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়। কিন্তু সিরিয়াতে কাজ করার সময়ে সে আত্মিক অনুপ্রেরনা পায়। কোরানের অধ্যয়নের পরে সে ইসলাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। তার এ সিদ্ধান্ত বন্ধু ও পরিচিত মহলে বাধাপ্রাপ্ত হয়। "মানুষ এটা ভেবে অবাক হয় একজন শিক্ষিত মিডল ক্লাস শ্বেতাঙ্গ নারী কি করে ইসলাম পছন্দ করতে পারে।" ক্যামিলা বলে।

যদিও ক্যামিলা নিজের বিশ্বাসে অটল, সে আর জনসমক্ষে হিজাব পরে না। কিন্তু অন্য কয়েকজন এরকম নারী বলেছে হিজাবকে তারা স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে দেখে থাকে।

লিন আলী মনে করেন সেই স্মরনীয় রাতের কথা, "আমি আমার বন্ধুর ২১তম জন্মদিনে একটি বারে যাই। আমি শালীন পোশাকে হিজাব পরা অবস্থায় ছিলাম। দেখতে পেলাম অন্যরা কি করে নিজেদের প্রদর্শনে ব্যস্ত। তারা ছিল মাতাল, প্রলাপকারী এবং সুড়সুড়ি মার্কা নাচ নিয়ে ব্যস্ত। এই প্রথম আমি আমার আগের জীবনকে একজন বহিরাগতের দৃষ্টিতে দেখলাম এবং বুঝলাম আমার আগের জীবনে আমার আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি মুক্তি খুজে পেয়েছি। এই তো সত্যিকারের আমি, যে পাচবার নামাজ এবং স্থানীয় মসজিদের ক্লাস নিয়ে সুখী। আমি আর এই ভেঙ্গে যাওয়া সমাজের দাসী নই।"

ক্রিস্টিন বেকার, যে কিনা নিজের আত্মিক যাত্রা নিয়ে "এমটিভি থেকে মক্কায় ডাক" নামে একটি বই লিখেছেন, বিশ্বাস করেন যে এই আধুনিক স্বাধীন মুসলিম নারীরাই একযোগে পৃথিবীকে দেখাতে পারবেন যে, আমি (ইভ আহমেদ) যে নারী অধিকার হরনকারী ইসলামী দুনিয়ার বড় হয়েছি সেটা প্রকৃত পৃথিবী নয়।

তিনি (ক্রিস্টিন) বলেন, "মুসলিম সমাজে জন্ম নেয়া নারীরা হতাশা গ্রস্ত হয়ে যায় এবং এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। কিন্তু গভীরে গেলে বোঝা যায় যে এটা বিশ্বাস নয়, বরং সংস্কৃতির প্রতি অনাস্থা।" .. "কিছু নিয়ম যেমন, যেমন নিজেদের মধ্যে বিয়ে করা কিংবা মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাবে তাই নারী শিক্ষাকে গুরুত্ব হীন ভাবা - এগুলো কোরানে কোথায় রয়েছে। না, সেরকম কিছু নেই।".... "প্রচুর মুসলিম এসব বাজে ভার্সনকে পরিত্যাগ করে আত্মিক এবং বুদ্ধিবাদী এপ্রোচ নিয়েছে যা পূর্বেকার সময়ের অবস্থার বিপরীত। এভাবেই, পৃথিবীকে ইসলামের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে, আমি আমার জীবন কাটাতে চাই।"

যদিও আমি তাদের আবেগকে লালন করিনা, তবুও আমি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই সেসব নারীদের যাদের ইন্টারভিউ আমি এ লেখায় নিয়েছি। এরা সবাই বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষিত, এবং প্রচুর চিন্তা ভাবনা করে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন - এখনও তাদের ধর্মকে ভালবাসেন। তাদের প্রতি শুভ কামনা। লরেল বুথের প্রতিও শুভ কামনা। কিন্তু একটি শব্দ দিয়ে তাদের এবং আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে পার্থক্য করা যায় - "পছন্দ"।

যদি আমি নিয়ন্ত্রিত হবার বদলে স্বনিয়ন্ত্রিত হতাম, কুক্ষিগত হবার বদলে আত্ম ক্ষমতায়নের অনুভূতি সম্পন্ন হতাম - হয়তবা আজও আমি একজন প্রাকটিসিং মুসলিম থাকতাম। সেই সাথে বাবার ধর্মকে পরিত্যাগ করার দংশন থেকে মুক্তি পেতাম।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন